যারা এই আমি কিংবদন্তির কথা বলছি ব্যাখ্যা জানতে ইচ্ছুক তারা আজকের এই পোষ্ট শেষ পর্যন্ত অপড়তে থাকুন । আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে আমরা এই আমি কিংবদন্তির কথা বলছি কবিতার ব্যাখ্যা শেয়ার করব। চলুন তাহলে বেশি কথা না বাড়িয়ে এই আমি কিংবদন্তির কথা বলছি ব্যাখ্যাগুলো একদম সহজ ভাষায় আলোচন করা যাক।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি ব্যাখ্যা
নিচে আলোচনা করা হলোঃ
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি। তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল |
“আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি। / তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল / তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল”
ব্যাখ্যা:
এই তিনটি লাইনের মাধ্যমে কবি আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবনের দুটি দিক তুলে ধরেছেন।
প্রথম দিক:
“তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল”
এই লাইনটি বুঝায় যে, আমাদের পূর্বপুরুষরা কৃষিজীবী ছিলেন। তাদের করতলে মাটির স্পর্শ ছিল, মাটির গন্ধ ছিল। তারা কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
দ্বিতীয় দিক:
“তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল”
এই লাইনটি বুঝায় যে, আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবন ছিল সংগ্রামময়। তাদেরকে বারবার বহিঃশত্রুর আক্রমণের শিকার হতে হত। তাদের পিঠে রক্তের দাগ ছিল, যা যুদ্ধের ক্ষতের প্রতীক।
সারসংক্ষেপ:
এই তিনটি লাইনের মাধ্যমে কবি আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন। একদিকে তাদের কঠোর পরিশ্রমী জীবন, অন্যদিকে তাদের সংগ্রামময় জীবন। এই দুটি দিকই আমাদের জাতির ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কিছু অতিরিক্ত তথ্য:
- ‘পূর্বপুরুষ’ বলতে আমাদের সকলের পূর্বপুরুষ, বাঙালি জাতির আদি পিতাদের বোঝানো হয়েছে।
- ‘পলিমাটি’ বলতে উর্বর মাটি বোঝায়।
- ‘রক্তজ্বর’ বলতে একটি ত্বকের রোগ বোঝায় যা শরীরে লালচে দাগ তৈরি করে।
- এই লাইনগুলো ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
‘তিনি অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা বলতেন অরণ্য এবং শ্বাপদের কথা বলতেন পতিত জমি আবাদের কথা বলতেন তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।’ |
ব্যাখ্যা:
এই চারটি লাইনের মাধ্যমে কবি আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন।
প্রথম দিক:
“তিনি অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা বলতেন”
এই লাইনটি বুঝায় যে, আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন সাহসী ও দুঃসাহসী। তারা পাহাড়ের মতো বাধা অতিক্রম করে নতুন জায়গায় বসতি স্থাপন করতেন।
দ্বিতীয় দিক:
“অরণ্য এবং শ্বাপদের কথা বলতেন”
এই লাইনটি বুঝায় যে, আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রকৃতির সাথে সংযুক্ত ছিলেন। তারা অরণ্যের বিপদ সম্পর্কে জানতেন এবং শ্বাপদের মতো হিংস্র প্রাণীর সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতেন।
তৃতীয় দিক:
“পতিত জমি আবাদের কথা বলতেন”
এই লাইনটি বুঝায় যে, আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন পরিশ্রমী। তারা পতিত জমি আবাদ করে খাদ্য উৎপাদন করতেন।
চতুর্থ দিক:
“তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।”
এই লাইনটি বুঝায় যে, আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন সৌন্দর্যবোধ সম্পন্ন। তারা কবিতা রচনা ও আবৃত্তি করতেন।
সারসংক্ষেপ:
এই চারটি লাইনের মাধ্যমে কবি আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন। তাদের সাহস, পরিশ্রম, সৌন্দর্যবোধ – এই সবকিছুই আমাদের জাতির ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কিছু অতিরিক্ত তথ্য:
- ‘পূর্বপুরুষ’ বলতে আমাদের সকলের পূর্বপুরুষ, বাঙালি জাতির আদি পিতাদের বোঝানো হয়েছে।
- ‘অতিক্রান্ত’ বলতে অতিক্রম করা বোঝায়।
- ‘অরণ্য’ বলতে বন বোঝায়।
- ‘শ্বাপদ’ বলতে হিংস্র প্রাণী বোঝায়।
- ‘পতিত’ বলতে অনাবাদী বোঝায়।
- ‘কবি’ বলতে কবিতা রচয়িতা বোঝায়।
জিহবায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা। |
ব্যাখ্যা:
কবি এই লাইনের মাধ্যমে বলতে চাচ্ছেন যে, সত্য কথা সবসময় কবিতার মতো সুন্দর। জিহ্বা থেকে উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ আমাদের মনকে আনন্দিত করে।
কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা:
ব্যাখ্যা:
কবি এই লাইনের মাধ্যমে বলতে চাচ্ছেন যে, কৃষকের পরিশ্রমের ফসল কবিতার মতো সুন্দর। কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কৃষকের পরিশ্রম ও ত্যাগের প্রতীক।
সারসংক্ষেপ:
কবি এই দুটি লাইনের মাধ্যমে সত্য ও পরিশ্রমের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলতে চাচ্ছেন যে, সত্য ও পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে পারি।
কিছু অতিরিক্ত তথ্য:
- ‘জিহ্বা’ বলতে জিহ্বা বোঝায়।
- ‘উচ্চারিত’ বলতে উচ্চারণ করা বোঝায়।
- ‘সত্য’ বলতে সত্যি কথা বোঝায়।
- ‘কর্ষিত’ বলতে চাষ করা বোঝায়।
- ‘শস্যদানা’ বলতে ধানের শীষ বোঝায়।
যে কবিতা শুনতে জানে না সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে। যে কবিতা শুনতে জানে না সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। যে কবিতা শুনতে জানে না সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।’ |
“যে কবিতা শুনতে জানে না / সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে। / যে কবিতা শুনতে জানে না / সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। / যে কবিতা শুনতে জানে না / সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।”
ব্যাখ্যা:
এই তিনটি লাইনের মাধ্যমে কবি কবিতার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন যে, কবিতা শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে।
প্রথম লাইন:
“যে কবিতা শুনতে জানে না / সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে।”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি বলতে চাচ্ছেন যে, যে ব্যক্তি কবিতা শুনতে জানে না, সে জীবনের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে না। তার জীবন ঝড়ের মতো উত্তাল ও বিষণ্ণ হবে।
দ্বিতীয় লাইন:
“যে কবিতা শুনতে জানে না / সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি বলতে চাচ্ছেন যে, যে ব্যক্তি কবিতা শুনতে জানে না, সে জীবনের সীমাহীন সম্ভাবনার কথা জানতে পারে না। তার জীবন সীমাবদ্ধ ও একঘেয়ে হবে।
তৃতীয় লাইন:
“যে কবিতা শুনতে জানে না / সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি বলতে চাচ্ছেন যে, যে ব্যক্তি কবিতা শুনতে জানে না, সে সারাজীবন অন্যের আধীনে থাকবে। সে নিজের জীবনের কর্তা হতে পারবে না।
সারসংক্ষেপ:
কবি এই তিনটি লাইনের মাধ্যমে কবিতার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন যে, কবিতা আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে, আমাদের সৌন্দর্যের উপলব্ধি করতে সাহায্য করে এবং আমাদের জীবনের কর্তা হতে অনুপ্রাণিত করে।
কিছু অতিরিক্ত তথ্য:
- ‘কবিতা’ বলতে কাব্যিক রচনা বোঝায়।
- ‘আর্তনাদ’ বলতে চিৎকার বোঝায়।
- ‘দিগন্ত’ বলতে দূরতম সীমানা বোঝায়।
- ‘অধিকার’ বলতে অধিকার বোঝায়।
- ‘ক্রীতদাস’ বলতে দাস বোঝায়।
আমি উচ্চারিত সত্যের মতো স্বপ্নের কথা বলছি। উনোনের আগুনে আলোকিত একটি উজ্জ্বল জানালার কথা বলছি।’ |
ব্যাখ্যা:
এই তিনটি লাইনের মাধ্যমে কবি স্বপ্নের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন যে, স্বপ্ন সত্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। স্বপ্ন আমাদের জীবনকে দিকনির্দেশনা দেয় এবং আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে।
প্রথম লাইন:
“আমি উচ্চারিত সত্যের মতো / স্বপ্নের কথা বলছি।”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি বলতে চাচ্ছেন যে, স্বপ্ন কেবল কল্পনার বিষয় নয়, বরং এটি সত্যের মতোই বাস্তব। স্বপ্ন আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে।
দ্বিতীয় লাইন:
“উনোনের আগুনে আলোকিত / একটি উজ্জ্বল জানালার কথা বলছি।”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি বলতে চাচ্ছেন যে, স্বপ্ন আমাদের জীবনে আলোকিত করে। স্বপ্ন আমাদের জীবনে আশা ও অনুপ্রেরণা যোগায়।
তৃতীয় লাইন:
“উনোনের আগুনে আলোকিত / একটি উজ্জ্বল জানালার কথা বলছি।”
এই লাইনটি পূর্ববর্তী লাইনের ব্যাখ্যা করে। উনোনের আগুনের আলো উজ্জ্বল জানালার মতো স্বপ্নকে আমাদের জীবনে আলোকিত করে।
সারসংক্ষেপ:
কবি এই তিনটি লাইনের মাধ্যমে স্বপ্নের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন যে, স্বপ্ন আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে, আমাদের জীবনে আশা ও অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে।
‘আমি আমার মায়ের কথা বলছি, তিনি বলতেন প্রবহমান নদী যে সাঁতার জানে না তাকেও ভাসিয়ে রাখে। |
ব্যাখ্যা:
এই দুটি লাইনের মাধ্যমে কবি মায়ের মুখ থেকে শোনা একটি জ্ঞানের কথা তুলে ধরেছেন।
প্রথম লাইন:
“আমি আমার মায়ের কথা বলছি”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি স্পষ্ট করেছেন যে, এই জ্ঞানের উৎস তার মা।
দ্বিতীয় লাইন:
“তিনি বলতেন প্রবহমান নদী / যে সাঁতার জানে না তাকেও ভাসিয়ে রাখে।”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি মায়ের জ্ঞানের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন, প্রবহমান নদী যেমন সাঁতার না জানা ব্যক্তিকেও ভাসিয়ে রাখে, তেমনি জীবনের প্রবাহে আমাদের হতাশ হতে হবে না। জীবনের প্রবাহ আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সারসংক্ষেপ:
কবি এই দুটি লাইনের মাধ্যমে জীবনের প্রতি আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন, জীবনের প্রবাহ আমাদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, আমাদেরকে শুধু সাহসী হতে হবে।
‘যে কবিতা শুনতে জানে না সে নদীতে ভাসতে পারে না। যে কবিতা শুনতে জানে না সে মাছের সঙ্গে খেলা করতে পারে না। যে কবিতা শুনতে জানে না সে মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনতে পারে না।’ |
ব্যাখ্যা:
এই তিনটি লাইনের মাধ্যমে কবি কবিতার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন যে, কবিতা শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে।
প্রথম লাইন:
“যে কবিতা শুনতে জানে না / সে নদীতে ভাসতে পারে না।”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি বলতে চাচ্ছেন যে, যে ব্যক্তি কবিতা শুনতে জানে না, সে জীবনের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে না। তার জীবন নদীর মতো স্রোতহীন ও একঘেয়ে হবে।
দ্বিতীয় লাইন:
“যে কবিতা শুনতে জানে না / সে মাছের সঙ্গে খেলা করতে পারে না।”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি বলতে চাচ্ছেন যে, যে ব্যক্তি কবিতা শুনতে জানে না, সে জীবনের স্পন্দন অনুভব করতে পারে না। তার জীবন নিষ্প্রাণ ও বিরস হবে।
তৃতীয় লাইন:
“যে কবিতা শুনতে জানে না / সে মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনতে পারে না।”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি বলতে চাচ্ছেন যে, যে ব্যক্তি কবিতা শুনতে জানে না, সে জীবনের স্নেহ ও ভালোবাসা উপভোগ করতে পারে না। তার জীবন শুষ্ক ও রুক্ষ হবে।
সারসংক্ষেপ:
কবি এই তিনটি লাইনের মাধ্যমে কবিতার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন যে, কবিতা আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে, আমাদের সৌন্দর্যের উপলব্ধি করতে সাহায্য করে এবং আমাদের জীবনে স্পন্দন, আনন্দ ও ভালোবাসা যোগায়।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি আমি আমার পূর্বপুরুষদের কথা বলছি। আমি বিচলিত স্নেহের কথা বলছি গর্ভবতী বোনের মৃত্যুর কথা বলছি আমি আমার ভালোবাসার কথা বলছি।’ << |
ব্যাখ্যা:
এই পাঁচটি লাইনের মাধ্যমে কবি নিজের কবিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন।
প্রথম লাইন:
“আমি কিংবদন্তির কথা বলছি”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি বলছেন যে, তার কবিতা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে যুক্ত। তিনি কবিতায় কিংবদন্তির মাধ্যমে অতীতের গল্প বলছেন।
দ্বিতীয় লাইন:
“আমি আমার পূর্বপুরুষদের কথা বলছি”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি বলছেন যে, তিনি তার কবিতায় পূর্বপুরুষদের স্মৃতি ও ত্যাগের কথা তুলে ধরেছেন।
তৃতীয় লাইন:
“আমি বিচলিত স্নেহের কথা বলছি”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি বলছেন যে, তার কবিতায় স্নেহের বেদনা ও বিরহের অনুভূতি ফুটে উঠেছে।
চতুর্থ লাইন:
“গর্ভবতী বোনের মৃত্যুর কথা বলছি”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি বলছেন যে, তিনি তার কবিতায় ব্যক্তিগত বেদনা ও বিয়োগান্ত ঘটনার কথাও তুলে ধরেছেন।
পঞ্চম লাইন:
“আমি আমার ভালোবাসার কথা বলছি”
এই লাইনের মাধ্যমে কবি বলছেন যে, তার কবিতায় প্রেম ও ভালোবাসার অনুভূতিও প্রকাশ পেয়েছে।
সারসংক্ষেপ:
কবি এই পাঁচটি লাইনের মাধ্যমে তার কবিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সামগ্রিক ধারণা দিয়েছেন। তিনি বলছেন যে, তার কবিতা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, স্মৃতি, বেদনা, ভালোবাসা – এসবকিছুরই মিশ্রণ।
‘যে কবিতা শুনতে জানে না সে সন্তানের জন্য মরতে পারে না। যে কবিতা শুনতে জানে না সে ভালোবেসে যুদ্ধে যেতে পারে না। যে কবিতা শুনতে জানে না সে সূর্যকে হৃদপিণ্ডে ধরে রাখতে পারে না। |
ব্যাখ্যা:
-
প্রথম পংক্তি: “যে কবিতা শুনতে জানে না / সে সন্তানের জন্য মরতে পারে না” – এই পংক্তিতে কবি বলেছেন যে কবিতা মানুষের মনে সাহস ও ত্যাগের অনুপ্রেরণা জাগায়। যে ব্যক্তি কবিতার সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে, সে সন্তানের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধাবোধ করে না।
-
দ্বিতীয় পংক্তি: “যে কবিতা শুনতে জানে না / সে ভালোবেসে যুদ্ধে যেতে পারে না” – এই পংক্তিতে কবি ভালোবাসার জন্য ত্যাগ স্বীকার করার কথা বলেছেন। যে ব্যক্তি কবিতার ভাষা বোঝে, সে জানে ভালোবাসার জন্য অনেক সময় যুদ্ধ করতে হয়, এমনকি প্রিয়জনের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করতে হয়।
-
তৃতীয় পংক্তি: “যে কবিতা শুনতে জানে না / সে সূর্যকে হৃদপিণ্ডে ধরে রাখতে পারে না” – এই পংক্তিতে কবি কবিতার অনুপ্রেরণা ও আশার কথা বলেছেন। যে ব্যক্তি কবিতার আলোয় আলোকিত, সে তার হৃদয়ে সূর্যের আলো ধারণ করতে পারে। এই আলো তাকে জীবনের বিপদ ও বেদনার মধ্যেও আশার দিক দেখায়।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি আমি আমার পূর্বপুরুষদের কথা বলছি। তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল কারণ তিনি ক্রীতদাস ছিলেন।’ |
ব্যাখ্যা:
-
প্রথম পংক্তি: “আমি কিংবদন্তির কথা বলছি” – এই পংক্তিতে কবি তার পূর্বপুরুষদের কথা “কিংবদন্তি” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের বেদনার স্মৃতি কালের সাথে সাথে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে।
-
দ্বিতীয় পংক্তি: “আমি আমার পূর্বপুরুষদের কথা বলছি” – এই পংক্তিতে কবি স্পষ্ট করে বলছেন যে তিনি তার পূর্বপুরুষদের বেদনার কথা বলছেন।
-
তৃতীয় পংক্তি: “তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল” – এই পংক্তিতে কবি তার পূর্বপুরুষদের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। ক্রীতদাসদের উপর নির্যাতন করা হত এবং তাদের শরীরে রক্তজবার মতো ক্ষত তৈরি হত।
-
চতুর্থ পংক্তি: “কারণ তিনি ক্রীতদাস ছিলেন” – এই পংক্তিতে কবি নির্যাতনের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। ক্রীতদাসদের উপর নির্যাতন করা হত কারণ তারা ছিল অধীন ও নিরাপত্তাহীন।
যে কর্ষণ করে শস্যের সম্ভার তাকে সমৃদ্ধ করবে। যে মৎস্য লালন করে প্রবহমান নদী তাকে পুরস্কৃত করবে। যে গাভীর পরিচর্যা করে জননীর আশীর্বাদ তাকে দীর্ঘায়ু করবে। যে লৌহখন্ডকে প্রজ্বলিত করে ইস্পাতের তরবারি তাকে সশস্ত্র করবে। |
ব্যাখ্যা:
-
প্রথম পংক্তি: “যে কর্ষণ করে” – এই পংক্তিতে কবি কৃষকদের কথা বলছেন, যারা জমি চাষ করে খাদ্যশস্য উৎপাদন করে।
-
দ্বিতীয় পংক্তি: “শস্যের সম্ভার তাকে সমৃদ্ধ করবে” – এই পংক্তিতে কবি বলেছেন যে কৃষকদের পরিশ্রমের ফসল তাদের জীবনে সমৃদ্ধি আনবে।
-
তৃতীয় পংক্তি: “যে মৎস্য লালন করে” – এই পংক্তিতে কবি মৎস্যজীবীদের কথা বলছেন, যারা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে।
-
চতুর্থ পংক্তি: “প্রবহমান নদী তাকে পুরস্কৃত করবে” – এই পংক্তিতে কবি বলেছেন যে মৎস্যজীবীদের পরিশ্রমের ফসল তাদের জীবনে নদীর আশীর্বাদ হিসেবে আসবে।
-
পঞ্চম পংক্তি: “যে গাভীর পরিচর্যা করে” – এই পংক্তিতে কবি গো-পালনকারীদের কথা বলছেন, যারা গরুর পরিচর্যা করে দুধ ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করে।
-
ষষ্ঠ পংক্তি: “জননীর আশীর্বাদ তাকে দীর্ঘায়ু করবে” – এই পংক্তিতে কবি বলেছেন যে গো-পালনকারীদের পরিশ্রমের ফসল তাদের জীবনে দীর্ঘায়ু ও সমৃদ্ধি আনবে।
-
সপ্তম পংক্তি: “যে লৌহখন্ডকে প্রজ্বলিত করে” – এই পংক্তিতে কবি কারিগরদের কথা বলছেন, যারা লোহা গরম করে তরবারি ও অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি করে।
-
অষ্টম পংক্তি: “ইস্পাতের তরবারি তাকে সশস্ত্র করবে” – এই পংক্তিতে কবি বলেছেন যে কারিগরদের পরিশ্রমের ফসল তাদের জীবনে সুরক্ষা ও শক্তি দান করবে।
‘দীর্ঘদেহ পুত্রগণ আমি তোমাদের বলছি। আমি আমার মায়ের কথা বলছি বোনের মৃত্যুর কথা বলছি ভাইয়ের যুদ্ধের কথা বলছি আমি আমার ভালোবাসার কথা বলছি।’ <<. . >> ‘আমি কবি এবং কবিতার কথা বলছি। সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান কবিতা সুপুরুষ ভালোবাসার সুকন্ঠ সংগীত কবিতা জিহবায় উচ্চারিত প্রতিটি মুক্ত শব্দ কবিতা রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা। |
কবি এখানে কবিতাকেই সকল মুক্তির উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান- মানে বুঝানো হয়েছে কবিতার শক্তিই সম্মুখ সমরে সশস্ত্র হয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। ভালোবাসার সুকন্ঠ সংগীত ও কবিতা। প্রতিটি মুক্ত শব্দ যা আমাদের দ্বারা উচ্চারিত হয়- সেটিও কবিতা, এখানে কবিতা হয়ে উঠেছে মুক্তি, প্রতিরোধ ও জাতীয়তাবোধের প্রতীক।
আমরা কি তাঁর মতো কবিতার কথা বলতে পারবো
আমরা কি তাঁর মতো স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো।’
|