বাচ্চাদের বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত। বাচ্চাদের বমি বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়

বাচ্চাদের বমি একটি সাধারণ সমস্যা যা প্রায় প্রতিটি বাবা-মা’র জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। বিভিন্ন কারণে বাচ্চাদের বমি হতে পারে, যেমন খাদ্যে অ্যালার্জি, খাদ্য বিষক্রিয়া, পেটের ভাইরাস, অথবা কখনও কখনও অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ফলে। বাচ্চাদের বমি হলে তাদের কী খাবার খাওয়া উচিত এবং কীভাবে ঘরোয়া উপায়ে বমি বন্ধ করা যায় তা নিয়ে এই বিশদ আলোচনা। তাই অবশ্যই এই বাচ্চাদের বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত। বাচ্চাদের বমি বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় গুলো জানতে আজকের পোষ্ট পড়ুন।

বাচ্চাদের বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত। বাচ্চাদের বমি বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়

তাহলে চলুন এখন আমরা এই বাচ্চাদের বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত। বাচ্চাদের বমি বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নেই।

আরোও পড়ুনঃ বাচ্চাদের বমি বন্ধ করার দোয়া শিখে রাখুন

বাচ্চাদের বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত

১. পানি এবং হালকা তরল:

  • বমির ফলে বাচ্চাদের শরীরে পানিশূন্যতা হতে পারে। তাই প্রথমে তাদের প্রচুর পানি এবং অন্যান্য হালকা তরল যেমন ওআরএস (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন) খাওয়ানো উচিত।
  • প্রতি ১৫-৩০ মিনিট পর পর ছোট ছোট করে পানি পান করাতে হবে। একবারে বেশি পানি খাওয়ালে বমি আবার হতে পারে।

২. ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয়:

  • বাজারে বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় পাওয়া যায় যা বাচ্চাদের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে অবশ্যই বাচ্চার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তা খাওয়াতে হবে।

৩. ফ্ল্যাট জিঞ্জার অ্যাল:

  • বাচ্চাদের পেটে আরাম দেওয়ার জন্য ফ্ল্যাট (অর্থাৎ ফেনা ছাড়া) জিঞ্জার অ্যাল একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে এটি খুব কম পরিমাণে খাওয়ানো হয়।
আরোও পড়ুনঃ   মেয়েদের যৌবন কত বছর থাকে - মেয়েদের যৌবন নিয়ে কিছু কথা

৪. ব্রাট ডায়েট:

  • ব্রাট ডায়েট বাচ্চাদের বমি হলে খুব উপকারী হতে পারে। ব্রাট ডায়েটে রয়েছে:
    • Banana (কলা)
    • Rice (চাল)
    • Applesauce (আপেল সস)
    • Toast (টোস্ট বা সেঁকা রুটি)
  • এই খাবারগুলো হালকা এবং সহজে হজম হয়, যা বাচ্চাদের পেটের আরাম এনে দেয়।

৫. সাদা ভাত:

  • সাদা ভাত খুব হালকা এবং সহজে হজম হয়। বাচ্চাদের ভাত খাওয়ানো হলে তাদের পেটে আরাম পাওয়া যায়।

৬. ফলের জুস:

  • বাচ্চাদের বমি হলে ফলের জুস দেওয়া যেতে পারে। তবে খুব বেশি অ্যাসিডিক জুস না দিয়ে আপেল বা নাশপাতির জুস খাওয়ানো ভালো।

৭. পালং শাকের স্যুপ:

  • পালং শাকের স্যুপ বাচ্চাদের জন্য পুষ্টিকর এবং হালকা। এটি সহজে হজম হয় এবং পুষ্টি জোগায়।

৮. প্লেইন পাস্তা:

  • তেল বা মশলা ছাড়া প্লেইন পাস্তা খাওয়ানো যেতে পারে। এটি হালকা এবং সহজে হজম হয়।

বাচ্চাদের বমি বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়

১. আদার ব্যবহার:

  • আদা বমি বন্ধ করার একটি প্রাকৃতিক উপায়। বাচ্চাদের আদার চা খাওয়ানো যেতে পারে।
  • আদার চা বানাতে ১-২ টুকরা আদা গরম পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। তবে এটি খাওয়ানোর আগে নিশ্চিত হতে হবে যে এটি খুব বেশি গরম না হয়।

২. পুদিনা পাতার ব্যবহার:

  • পুদিনা পাতা বাচ্চাদের পেটের আরাম এনে দেয়। পুদিনার চা খাওয়ানো যেতে পারে অথবা পুদিনার পাতা চিবাতে দেওয়া যেতে পারে।

৩. ফেনেলের বীজ:

  • ফেনেলের বীজ চিবাতে দেওয়া যেতে পারে অথবা ফেনেলের চা বানিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। এটি পেটের গ্যাস কমায় এবং বমি বন্ধ করে।
  1. দারুচিনি:
    • দারুচিনি বাচ্চাদের পেটের আরাম এনে দেয় এবং বমি বন্ধ করতে সাহায্য করে।
    • দারুচিনি চা বানাতে এক টুকরা দারুচিনি গরম পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে নিতে হবে এবং এটি ঠান্ডা করে খাওয়ানো যেতে পারে।

৫. আনারসের রস:

  • আনারসের রস বাচ্চাদের পেটের আরাম এনে দেয় এবং বমি বন্ধ করতে সাহায্য করে।
  • আনারসের রস খাওয়ানোর আগে নিশ্চিত হতে হবে যে এটি তাজা এবং প্রাকৃতিক।
আরোও পড়ুনঃ   ব্রেস্ট নিয়ে খেলা করা

৬. অরেঞ্জ জুস:

  • কমলার রস বাচ্চাদের পেটের আরাম এনে দেয় এবং বমি বন্ধ করতে সাহায্য করে। তবে এটি খুব বেশি অ্যাসিডিক না হওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

৭. ধনে পাতা:

  • ধনে পাতার রস বাচ্চাদের পেটের আরাম এনে দেয় এবং বমি বন্ধ করতে সাহায্য করে।
  • তাজা ধনে পাতা পিষে তার রস বের করে খাওয়ানো যেতে পারে।

৮. খেজুরের ব্যবহার:

  • খেজুর বাচ্চাদের জন্য পুষ্টিকর এবং এটি পেটের আরাম এনে দেয়।
  • খেজুর খাওয়ানো যেতে পারে অথবা খেজুরের রস খাওয়ানো যেতে পারে।

বাচ্চাদের বমি হলে করণীয় এবং সতর্কতা

বাচ্চাদের বমি হলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যাতে তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।

১. শান্ত রাখা:

  • বাচ্চাদের বমি হলে তাদের শান্ত রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চাদের মনে করিয়ে দিন যে এটি একটি সাধারণ সমস্যা এবং তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।

২. বেড রেস্ট:

  • বাচ্চাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। তাদের শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত রাখা উচিত।

৩. খাদ্য গ্রহণে সতর্কতা:

  • বাচ্চাদের খাদ্য গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তারা একবারে বেশি খাবার না খেয়ে ছোট ছোট করে খাবার খাওয়া উচিত।

৪. ডাক্তারের পরামর্শ:

  • বাচ্চাদের বমি দীর্ঘস্থায়ী হলে বা তাদের শরীরিক অবস্থা খারাপ হলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

উপসংহার

বাচ্চাদের বমি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা জরুরি। সঠিক খাবার খাওয়ানো এবং ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে বাচ্চাদের বমি বন্ধ করা সম্ভব। তবে দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই আর্টিকেলে বাচ্চাদের বমি হলে কী খাবার খাওয়া উচিত এবং ঘরোয়া উপায়ে বমি বন্ধ করার বিভিন্ন পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে যা প্রতিটি বাবা-মা’র জন্য সহায়ক হতে পারে। এরপরেও এই বাচ্চাদের বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত। বাচ্চাদের বমি বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *