রমজানের ছোট ছোট হাদিস ও ছোট ছোট আমল

আজকের এই পোষ্টে আপনাদের সাথে আমরা রমজানের ছোট ছোট হাদিস ও ছোট ছোট আমল শেয়ার করব। চলুন তাহলে রমজান মাসের ফজিলত সহ এই রমজানের ছোট ছোট হাদিস ও ছোট ছোট আমল গুলো জেনে নেওয়া যাক।

রমজানের ছোট ছোট হাদিস

নিচে এক এক করে আপনাদের জন্য সুন্দরভাবে এই রমজানের ছোট ছোট হাদিস গুলো তুলে ধরা হলো। এমনকি কোন হাদিস টি কোন গ্রন্থে পাবেন সেটাও এখানে আমরা উল্লেখ করে দিয়েছি।

সেহারী নিয়ে রমজানের ছোট ছোট হাদিস

আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, যায়দ বিন ষাবেত তাঁকে জানিয়েছেন যে, তাঁরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সেহরী খেয়ে (ফজরের) নামায পড়তে উঠে গেছেন। আনাস বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “সেহরী খাওয়া ও আযান হওয়ার মধ্যে কতটুকু সময় ছিল?’উত্তরে যায়দ বললেন, ‘পঞ্চাশ অথবা ষাটটি আয়াত পড়তে যতটুকু লাগে।’ (বুখারী ৫৭৫)

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, “সেহরী খাওয়াতে বরকত আসে। সুতরাং তোমরা তা খেতে ছেড়ো না; যদিও তাতে তোমরা এক ঢোক পানিও খাও। কেননা, যারা সেহরী খায় তাদের জন্য আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশতা দুআ করতে থাকেন।” (আহমাদ, মুসনাদ, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৩৬৮৩নং হাদীস)

ইফতার নিয়ে রমজানের ছোট ছোট হাদিস

✓ হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় (এ সময় যেকোনো নেক দোয়া কবুল করা হয়)। অন্যটি হলো (কেয়ামতের দিবসে) নিজ প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (তিরমিজি ৭৬৬,) আল্লাহর কাছে সাওমকারীর মুখের গন্ধ মিসকের সুগন্ধি হতেও উত্তম (বুখারী ৭৪৯২)

✓ আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইফতারের সময় রোযাদারের অবশ্যই একটি দু’আ আছে, যা রদ হয় না (কবুল হয়)। ইবনু আবূ মুলাইকা (রহ.) বলেন, আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-কে ইফতারের সময় বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ্! আমি আপনার দয়া ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি যা সব কিছুর উপর পরিব্যপ্ত, যেন আপনি আমাকে ক্ষমা করেন”। (ইবনে মাজাহ ১৭৫৩)

✓ হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, “আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে।” (তিরমিজি, আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬০, পৃষ্ঠা: ১৩১)।

✓ হজরত সাহল ইবনে সাআদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যত দিন লোকেরা ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ (বুখারি, সাওম অধ্যায়, হাদিস: ১৮৩৩)

✓ নবীজি (সা.) বলেন, ‘যখন রাত্র সেদিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন রোজাদার ইফতার করবে।’ (বুখারি, সাওম অধ্যায়, হাদিস: ১৮৩০)

ফজিলত সম্পর্কে রমজানের ছোট ছোট হাদিস

রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক।মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন ও হাদিসে কুদসিতে রোজাদারদের অনেক খুশির সংবাদ দিয়েছেন। রমজান নিয়ে ছোট হাদিস আর্টিকেলের এই অংশে আমরা রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে কিছু হাদিস জানব ইনশাআল্লাহ। চলুন এখন তাহলে এই ফজিলত সম্পর্কে রমজানের ছোট ছোট হাদিস  গুলো জেনে নেই।

✓ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমাযানকে স্বাগত জানাবার জন্য বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জান্নাতকে সাজানো হতে থাকে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, বস্তুত যখন রমাযানের প্রথম দিন শুরু হয়, ’আরশের নীচে জান্নাতের গাছপালার পাতাগুলো হতে ’’হূরিল ’ঈন’’-এর মাথার উপর বাতাস বইতে শুরু করে। তারপর হূরিল ’ঈন বলতে থাকে, হে আমাদের রব! তোমার বান্দাদেরকে আমাদের স্বামী বানিয়ে দাও। তাদের সাহচর্যে আমাদের আঁখি যুগল ঠাণ্ডা হোক আর তাদের চোখ আমাদের সাহচর্যে শীতল হোক। (মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদিস ১৯৬৭)

আরোও পড়ুনঃ   ইঁদুর তাড়ানোর দোয়া

✓ হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।-সহীহ বুখারী, হাদীস-১৮৯৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস-১০৭৯ (১), মুসনাদে আহমদ হাদীস-৮৬৮৪, সুনানে দারেমী, হাদীস-১৭৭৫

✓ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন,যে ব্যক্তি অসুস্থতা ও সফর ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে রমযানের একটি রোযাও ভঙ্গ করে, সে আজীবন রোযা রাখলেও ঐ রোযার হক আদায় হবে না।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯৮৯৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস : ৭৪৭৬; সহীহ বুখারী ৪/১৬০

✓ হযরত আলী রা. বলেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রমযান মাসের একটি রোযা ভঙ্গ করবে, সে আজীবন সেই রোযার (ক্ষতিপূরণ) আদায় করতে পারবে না।- মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯৮৭৮

✓ রোযার হালতে গীবত করলে, গালি-গালাজ করলে, টিভি-সিনেমা ইত্যাদি দেখলে, গান-বাদ্য শ্রবণ করলে এবং যে কোনো বড় ধরনের গুনাহে লিপ্ত হলে রোযা মাকরূহ হয়ে যায়। আর এ কাজগুলো যে সর্বাবস্থায় হারাম তা তো বলাই বাহুল্য।

✓ আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও সিয়াম পালন করে, আল্লাহ্ তার মুখমন্ডলকে দোযখের আগুন হতে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন।” (বুখারী,হাদিস ২৮৪০)

✓ আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রমাযানের সিয়াম ব্রত পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।” (সহীহ বুখারী, হাদিস ৩৮)

✓ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জান্নাতে রাইয়্যান’ নামক একটি দরজা আছে। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে সিয়াম (রোজা/রোযা) পালনকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর সিয়াম (রোজা/রোযা) পালনকারীগণ ছাড়া অন্য কেউ তাদের সাথে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। কিয়ামতের দিন সিয়াম (রোজা/রোযা) পালনকারীদেরকে ডেকে বলা হবে, সিয়াম (রোজা/রোযা) পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতঃপর সিয়াম (রোজা/রোযা) পালনকারীদের শেষ লোকটি প্রবেশ করার সাথে সাথে তা বন্ধ করে দেয়া হবে। অতঃপর সে দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস ১১৫২)

✓ হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমযানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমযান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৮৩৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস-৮৯৬৮, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস-১৮৮৪, তাবারানী হাদীস-৯০০৪, বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান, হাদীস-৩৩৩৫

✓ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রোযা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা মেটানো থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন দু’জনের সুপারিশই গ্রহণ করা হবে।-মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৬৫৮৯; তবারানী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/৪১৯

✓ আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ মানব সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের সাওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেন, “কিন্তু সিয়াম (রোজা/রোযা) আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিফল দান করব। বান্দা আমারই জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।” সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। একটি তার ইফত্বারের সময় এবং অপরটি তার প্রতিপালক আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। (সহীহ মুসলিম, হাদিস ১১৫১)

আরোও পড়ুনঃ   তোতলামি দূর করার দোয়া জেনে নিন

রমজানের ছোট ছোট আমল

এক. সিয়াম পালন করা

ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হলো সিয়াম। আর রমজান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমজান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এই মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

সিয়াম পালনের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমাদানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি : ২০১৪)

আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তার দ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৬৭)

দুই. সময় মতো নামাজ আদায় করা

সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মতো নামাজ আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১০৩)

এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, ‘সময় মতো নামাজ আদায় করা।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৩)

তিন. সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন শেখা

রমজান মাসে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো- সহিহভাবে কোরআন শেখা। আর কোরআন শিক্ষা করা ফরজ করা হয়েছে। কেননা কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আলাক, আয়াত : ০১)

আল্লাহর রাসুল (সা.) কোরআন শেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা কোরআন শিক্ষা করো এবং তিলাওয়াত করো।’ (মুসনাদ আলজামি, হাদিস : ৯৮৯০)

চার. অপরকে কোরআন পড়া শেখানো

রমজান মাস অপরকে কোরআন শেখানোর উত্তম সময়। এ মাসে আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজে সাহাবিদের কোরআন শিক্ষা দিতেন। এ বিষয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০২৭)

আরেক হাদিসে ‘যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দেবে, যত তিলাওয়াত হবে; তার সাওয়াব সে পাবে।’ (সহিহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবুবিয়্যাহ : ০৭)

পাঁচ. সাহরি খাওয়া

সাহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদিসে এসেছে, ‘সাহরি হলো বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরি খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরি খেয়ে নাও। কেননা সাহরির খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তাআলা ও তার ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১১১০১)

ছয়. সালাতুত তারাবি পড়া

সালাতুত তারাবি বা তারাবির নামাজ পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। তারাবি হক আদায় করে পড়তে হবে। হাদিসে এসেছে: ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমজানে কিয়ামু রমজান (সালাতুত তারাবিহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (সহিহ আল-বুখারি, হাদিস : ২০০৯)

তারাবির সালাতের হক আদায় করে অর্থাৎ ধীরস্থীরভাবে আদায় করতে হবে। তারাবি জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে প্রস্থান করা অবধি সালাত আদায় করবে (সালাতুত তারাবি) তাকে পুরো রাত কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব দান করা হবে।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৭৭)

সাত. বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা

এটি কোরআনের মাস। তাই এ মাসে অন্যতম কাজ হলো বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।’ (সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস : ২৯১০)

আল্লাহর রাসুল (সা.) রমজান ব্যতীত কোনো মাসে এত বেশি তিলাওয়াত করতেন না। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রমজান ব্যতীত অন্য কোনো রাতে আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত করতে কিংবা ভোর পর্যন্ত সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোজা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখিনি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭৭৩)

আরোও পড়ুনঃ   ঈদে মিলাদুন্নবী কি বিদআত: ইসলামের দৃষ্টিকোণ

আট. শুকরিয়া আদায় করা

রমজান মাস পাওয়া এক বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। সেজন্য আল্লাহ তাআলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং আগামী রমজান পাওয়ার জন্য তাওফিক কামনা করা। রমজান সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করো এবং তিনি তোমাদের যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করো এবং যাতে তোমরা শোকর করো।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন’।’’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ০৭)

আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করে বলতেন অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য (সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস : ২৭৩৮)

নয়. কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা

এ মাসটিতে একটি ভালো কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহবান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরও অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ করো। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস : ৬৮৪)

দশ. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া

রমজান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমাদানের কারণে আরও বেশি ফজিলত রয়েছে। যেহেতু সাহরি খাওয়ার জন্য উঠতে হয় সেজন্য রমজান মাসে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো- রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৮১২)

রমজান মাসের ফজিলত

রমজান মাস ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। এটি কেবল রোজা রাখার মাসই নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, সহানুভূতি ও ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধির মাস। রমজান মাসের অগণিত ফজিলত রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ফজিলত নীচে তুলে ধরা হলো:

ক) পাপ মোচন: রমজান মাস পাপ মোচনের এক অনন্য সুযোগ। এই মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে পূর্ববর্তী সকল পাপ ক্ষমা করে দেন আল্লাহ তা’আলা।

খ) জান্নাতের দরজা খোলা থাকে: রমজান মাস জান্নাতের দরজা খোলা থাকে এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ থাকে। এই মাসে নেক আমল করার মাধ্যমে জান্নাত লাভের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।

গ) লাইলাতুল কদর: রমজান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে লাইলাতুল কদর রয়েছে। এই রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এই রাতে ইবাদত করার মাধ্যমে অনেক বরকত লাভ করা সম্ভব।

ঘ) রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস: রমজান মাস রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এই মাসে আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি অশেষ রহমত ও মাগফিরাত বর্ষান।

ঙ) ফেরেশতাদের সাথে মুসাফাহা: রমজান মাসে রোজাদাররা প্রতি রাতে ফেরেশতাদের সাথে মুসাফাহা করেন।

চ) রোজার ফজিলত: রোজা রাখার মাধ্যমে অনেক গুণাহ ক্ষমা হয় এবং জান্নাত লাভের সুযোগ বৃদ্ধি পায়। রোজা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

ছ) দান-সদকার ফজিলত: রমজান মাসে দান-সদকারের ফজিলত অনেক বেশি। এই মাসে দান-সদকার করার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব।

জ) তাহাজ্জুদের ফজিলত: রমজান মাসে তাহাজ্জুদ পড়ার ফজিলত অনেক বেশি। এই মাসে তাহাজ্জুদ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য লাভ করা সম্ভব।

হ) রমজানের শেষ দশকের ফজিলত: রমজান মাসের শেষ দশক অনেক ফজিলত সমৃদ্ধ। এই দশ দিনে ইতিকাফ, তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নেক আমল করার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব।

রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে আরও জানতে হাদিস ও কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত।

রমজান মাস আমাদের জন্য একটি মহান সুযোগ। এই মাসের ফজিলত সম্পর্কে সচেতন হয়ে আমাদের সকলের উচিত এই মাসকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *