৩০টি আমার পথ প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর (১০০% কমন)

তোমরা যারা আমার পথ প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর খুজতেছিলা তাদের জন্য আমরা আজকে ৩০টি কমন উপযোগী আমার পথ প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করব। এগুলো যদি তোমরা ভালোভাব পড়ে যেতে পারো তাহলে ইনশাল্লাহ আমার পথ প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন কমন পেয়ে যাবা।

আমার পথ প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর

১. মেয়েলি বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক অনেক ভালো-কেন?
উত্তর : নিজের সত্যকে অস্বীকার করে অতিরিক্ত বিনয় প্রদর্শন মেয়েলি বিনয়। তার থেকে আত্মবিশ্বাস ও সততার বলিষ্ঠ স্বীকৃতি প্রদর্শন করে পৌরুষকে জাহির করা, যাকে বলা যেতে পারে অহংকারের পৌরুষ, তা অনেক ভালো। মেয়েলি বিনয় দুর্বলতার নামান্তর; তার চেয়ে নিজেকে চিনে আপনার সত্যকে আপনার গুরু, পথপ্রদর্শক ক-ারি বলে জানা অনেক ভালো। কেউ কেউ এটাকে অহংকার বলে মনে করতে পারে। আত্মবিশ্বাসের স্বীকৃতি এ অহংকারকে পৌরুষের অহংকার বলাই সংগত। মেয়েলি বিনয়ের চেয়ে এ পৌরুষের অহংকার অনেক অনেক ভালো।

২) প্রশ্ন: প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন কেন?
উত্তর: প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন, কারণ ভুলের মধ্য দিয়ে সঠিক বিষয়টি জানা যায় এবং অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়। ভুল স্বীকার করার মধ্য দিয়ে। মানুষ শিখতে পারে। এই শেখার মাধ্যমে মানুষের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়। ভুল না করলে মানুষ কখনই সঠিক বিষয়টি শিখতে পারবে না। তবে ভুল করে যদি কেউ ভুলকেই সত্য বলে আঁকড়ে ধরে থাকে তবে তার দ্বারা সঠিক জ্ঞান অর্জন কখনই সম্ভব নয়। প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন, কিন্তু ভন্ডামি করতে রাজি নন।

৩) প্রশ্ন: আপন সত্য ছাড়া মানুষ আর কাউকে কুর্নিশ করে না কেন?-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: মানুষ যখন নিজেকে চিনতে পারে তখন নিজের মাঝে অনেক বড় একটা জোর আসে, তখন সে আপন সত্য ছাড়া আর কাউকে কুর্নিশ করে না। আপন সত্যের মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে চিনতে পারে। আর নিজেকে চিনতে পারাটা মানবজীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। মানুষ যখন আপন শক্তিকে চেনে

তখন তার মাঝে কোনো মিথ্যার ভয় থাকে না। বাইরের কোনো ভয় তাকে স্পর্শ করতে পারে না। আর সেই কারণেই আপন সত্য দ্বারা মানুষ নিজেকে চিনতে পারলে অন্য কেউ ভয় দেখিয়ে তাকে পদানত রাখতে পারে না। তখন আপন সত্য ছাড়া মানুষ আর কাউকে কুর্নিশ করে না।

প্রশ্ন-৪. ‘আমার কর্ণধার আমি’- উক্তিটি দ্বারা প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘আমার কর্ণধার আমি’ — উক্তিটি দ্বারা প্রাবন্ধিক নিজের ওপর-কর্তৃত্বের গুরুত্ব কে বুঝিয়েছেন।
সমাজের প্রত্যেকেই একে-অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা স্বাধীন মত প্রকাশে বাধার সৃষ্টি করে। একে-অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে, কিন্তু নিজের ওপর কর্তৃত্ব থাকলে অনেক কাজ সহজেই করা যায় ।
‘আমার কর্ণধার আমি — উক্তিটি দ্বারা প্রাবন্ধিক নিজের ওপর- নিজের কর্তৃত্বের এ গুরুত্বকেই বুঝিয়েছেন ।

প্রশ্ন-৫. রাজ ভয়, লোক ভয় কেন প্রাবন্ধিককে বিপথে নিয়ে যাবে না?
উত্তর: প্রাবন্ধিক তাঁর অন্তরের সত্যকে চেনেন বলে রাজভয়-লোকভয় তাঁকে বিপথে নিয়ে যাবে না।
প্রাবন্ধিক মনে করেন, মানুষ যদি সত্যি করে তার আপন সত্যকে চিনে থাকে, তার অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকে, তাহলে বাইরের কোনো ভয়ই তার কিছু করতে পারবে না।
সত্য মানুষকে পথ দেখাবে আর মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করবে। নিজেকে চিনলে তার মনোবলই তাকে নতুনের পথে যুদ্ধ করার শক্তি জোগাবে। এখানে রাজ্যের ভয়, রাজ্যের ভেতরের বা বাইরের কোনো শক্তিই তাকে বিপথে নিয়ে যাবে না।

প্রশ্ন-৬. কবি নিজেকে ‘অভিশাপ-রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন কেন?
উত্তর: সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন বলেই কবি নিজেকে ‘অভিশাপ-রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন । কবি পুরাতন-জীর্ণ সমাজকে ঢেলে সাজাতে চান।
কিন্তু সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, সমাজরক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়। কবি এ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি তাদের অন্যায়কে অভিশাপ হয়ে ধ্বংস করতে চান। তাই তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ-রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন।

৭. কাজী নজরুল ইসলাম-এর মতে, দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ কী?
উত্তর : আত্মনির্ভরতার অভাবই কাজী নজরুল ইসলামের মতে দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ। কাজী নজরুল ইসলাম মনে করেন, আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে, সেইদিনই আমরা স্বাধীন হব। কিন্তু আমরা নিজের প্রতি বিশ্বাস না রেখে গান্ধীজির মতো মহাপুরুষের ওপর নির্ভর করেছিলাম। বলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন বিলম্বিত হয়েছিল। অর্থাৎ স্পষ্টত বোঝা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম আত্মনির্ভরতার অভাবকেই পরাধীনতার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।

আরোও পড়ুনঃ   (100% সঠিক) কুমিল্লা বোর্ড এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র বহুনির্বাচনি (নৈবেত্তিক উত্তর) সমাধান ২০২৪ । Hsc Bangla 1st paper mcq solution (Answer) 2024 Comilla Board

প্রশ্ন-৮. স্পষ্ট কথা বলার সময় বিনয়ভাব থাকে না কেন?
উত্তর: স্পষ্ট কথা বলায় এক ধরনের অহংকার কাজ করে বলে বিনয়ভাব তেমন থাকে না।
স্পষ্ট কথা বলার সময় কোনো ফাঁক-ফোকর থাকে না বলে মনে আপনাআপনি একটা জোর এসে থাকে। এটাকে স্পর্ধা বা অহংকার বলে ভুল হলেও আসলে তা নয়। মূলত’স্পষ্ট কথা বলার সময় একটা দৃঢ়তা কাজ করে বলে মানুষের মাঝে বিনয়ভাব থাকে না ।

৯. ‘যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে, যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।’ – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সুন্দরের পূজারি কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে মানব-ধর্মের কথা বলেছেন। ধর্মে কোনো ভেদাভেদ বা বৈষম্য নেই। পৃথিবীতে প্রত্যেক ধর্মই সত্য। শুধু ধর্মের ক্রিয়াকলাপ বা আচার-অনুষ্ঠান এক এক ধর্মের এক এক রকম। যে তার নিজের ধর্মের বিধি-বিধান সঠিকভাবে দিব্যজ্ঞানে চিনতে পারে তার অন্য ধর্মের প্রতি কোনো বিদ্বেষ বা অবহেলা থাকতে পারে না। তাই নিজ ধর্মের স্বরূপ জানলে নিজ ধর্মের প্রতি বিশ্বাস স্থাপিত হয় এবং সেই-ই প্রকৃত সত্য জানতে পারে বলে তার অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণা থাকে না।

প্রশ্ন-১০. ‘এই পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।’ লেখক কেন এ কথা বলেছেন?
উত্তর: পরাবলম্বন মানুষের সঞ্জীবনী শক্তি ও আত্মশক্তি ক্রমান্বয়ে বিনষ্ট করে ফেলে বলে লেখক একথা বলেছেন।
নিজের সত্তাকে বিকিয়ে অন্যের গলগ্রহ হয়ে থাকলে মানুষ ধীরে ধীরে অলস ও কর্মবিমুখ হয়ে পড়ে। মানুষের নিজের ভেতরে যে একটা দুর্ভেদ্য শক্তি আছে, তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তখন মানুষ অন্যের দানে, দয়ায় ও দাক্ষিণ্যে বেঁচে থাকে। এভাবে পরাবলম্বন আমাদের দাসত্বের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে তোলে।

প্রশ্ন-১১. ‘সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব বলতে পরাবলম্বনকে বোঝানো হয়েছে।
আত্মনির্ভরতা থেকেই স্বাধীনতা আসে। লেখকের বিশ্বাস, নিজের সত্যকে নিজের কর্ণধার মনে করলে আপন শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস আসে। এমন স্বাবলম্বনের কথা শেখাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। কিন্তু জনগণ মহাত্মা গান্ধীর সেই স্বাবলম্বনের কথা না বুঝে তাঁর ওপর নির্ভর করতে শুরু করে।
এটিই হলো পরাবলম্বন। পরাবলম্বন আত্মশক্তিকে নষ্ট করে দেয় বলে তৈরি হয় মানসিক দাসত্ব। তাই ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে পরাবলম্বনকে সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব বলা হয়েছে।

১২. ‘আমি আছি’- এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম ‘গান্ধীজি আছেন” – উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : “আমি আছি’ এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম গান্ধীজি আছেন”-উক্তিটিতে আমরা যে গান্ধীজির আদর্শ ঠিকমতো বুঝতে পারি নি তা বোঝানো হয়েছে। মহাত্মা গান্ধী জাতির অভিভাবকরূপে এদেশের মানুষদের স্বাবলম্বনের শিক্ষা দিচ্ছিলেন। প্রত্যেকটি মানুষকে শেখাচ্ছিলেন নিজের ওপর বিশ্বাস অটুট রাখতে। কিন্তু সেদিন আমরা তাঁর আদর্শ, তাঁর কথা ঠিক বুঝিনি। ফলে আমরা নিজের অস্তিত্বের ঘোষণা না করে বলেছিলাম, ‘গান্ধীজি আছেন’। আর নিজের পরিবর্তে গান্ধীজির ওপর নির্ভরশীলতার বিষয়টিই ব্যক্ত হয়েছে আলোচ্য উক্তিতে।

প্রশ্ন-১৩. ‘আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে’— ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে লেখক আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে আত্ম তথা নিজের ভেতরের সত্যকে জানতে বলেছেন ।
‘আমার পথ’ প্রবন্ধের লেখকের মতে, নিজেকে চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনিই একটা জোর আসে যে, সে আপন সত্য ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করে না।
অর্থাৎ কেউই তাকে ভয় দেখিয়ে পদানত করতে পারে না। মানুষের উচিত তার ভেতরের শক্তিকে উপলব্ধি করা এবং আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া। তবেই তার নিজের ওপর নিজের বিশ্বাস জন্মাবে । প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন-১৪. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের লেখক দাম্ভিক হতে চান কেন?
উত্তর: ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের লেখকের কাছে মানুষের মিথ্যা আত্মবিশ্বাস গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি প্রয়োজনে দাম্ভিক হতে চান ।
আলোচ্য প্রবন্ধের লেখক কাজী নজরুল ইসলাম সমাজ ও সমকাল পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে দেখেছেন, সুস্পষ্টভাবে নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশ করতে না জানলে তৈরি হয় পরনির্ভরতা, আহত হয় আমাদের ব্যক্তিত্ব।
নজরুলের কাছে মানুষের মিথ্যা ও সংশয়পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের গ্লানি গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তিনি মিথ্যা আত্মবিশ্বাসের পরিবর্তে নিজ সত্যে অটল থেকে দাম্ভিক হতে চান ।

প্রশ্ন-১৫. ‘আগুনের সম্মার্জনা’ বলতে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘আগুনের সম্মার্জনা’ বলতে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে সমাজের সকল অশুদ্ধি ও ক্লেদ দূর করার হাতিয়ারকে বোঝানো হয়েছে ।
‘আমার পথ’ প্রবন্ধে লেখক যে সমাজের ভিত্তি পচে গেছে তাকে সমূলে উৎপাটিত করার পক্ষপাতী। তিনি পক্ষপাতী যা কিছু অশুভ, মিথ্যা, মেকি তা দূর করার।
এজন্যে তাঁর মতে, প্রয়োজন আগুনের। কেননা আগুন সব রকম অশুদ্ধিকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। আগুনের সম্মার্জনা বলতে লেখক এ বিষয়টিকেই বুঝিয়েছেন ।

আরোও পড়ুনঃ   রাজনৈতিক অর্থনীতির জনক কে?

প্রশ্ন-১৬. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক কেন ভুল করতে রাজি আছেন?
উত্তর: ভুল স্বীকারের মাধ্যমে আত্মকে জানা যায় বলে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন।
সত্যকে জানতে, আত্মকে জানার জন্য ভুল সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে । ভুলের মাধ্যমেই কোনো ব্যক্তি নিজেকে জানতে পারে এবং নিজেকে সংশোধনও করতে পারে। কিন্তু ভুল করে যদি তা স্বীকার করা না হয়, তবে তা হয় ভণ্ডামির শামিল। প্রাবন্ধিক এরূপ ভণ্ডামি করতে রাজি নন। তাই বলা যায়, আত্মকে জানার জন্যই প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন ।

প্রশ্ন-১৭, ‘একমাত্র মিথ্যার জলই এই শিখাকে নেভাতে পারবে’— কথাটি বুঝিয়ে দাও ৷
উত্তর: মিথ্যা বা ভণ্ডামির সংস্পর্শে প্রকৃত সত্যের উপলব্ধি নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বোঝাতে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে ।
‘আমার পথ’ প্রবন্ধে লেখক আমিত্বকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। এজন্য প্রকৃত সত্যের উপলব্ধি থাকা জরুরি। এই উপলব্ধিকে টিকিয়ে রাখতে গিয়ে যদি কখনো ভুল হয়ে যায়, তখন নিঃসংকোচে তা স্বীকার করে নিতে হবে। কোনোরূপ মিথ্যা বা ভণ্ডামির আশ্রয় নেওয়া যাবে না। মিথ্যার আশ্রয় নিলে নিজের মধ্যকার প্রকৃত সত্যের বিনাশ ঘটবে। আর এটি বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটির অবতারণা করা হয়েছে।

প্রশ্ন-১৮. মানুষ-ধর্মকে সবচেয়ে বড়ো ধর্ম বলা হয় কেন?
উত্তর: মানুষ-ধর্ম তথা মনুষ্যত্ববোধই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম। কেননা এটি জাগ্রত হলেই মানুষে মানুষে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে।
মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটাতে হলে তাদের মধ্যকার ব্যবধান ঘোচাতে হবে। এ ব্যবধান ঘোচাতে হলে মানুষের ‘মানুষ’ পরিচয়টিকে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এর মাধ্যমে মিটে যাবে এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের বিরোধও। মনুষ্যত্ববোধের জাগরণই ধর্মের প্রকৃত সত্য উন্মোচন করতে পারে । তাই মানুষ-ধর্মকেই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম বলা হয়েছে।

১৯) প্রশ্ন: ‘আগুনের সম্মার্জনা’ বলতে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘আগুনের সম্মার্জনা’ বলতে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে সমাজে অসত্যরূপী আবর্জনা দূর করার জন্য লেখকের সত্যের শক্তি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহী সত্তাকে বোঝানো হয়েছে। আগুন সবকিছু পুড়িয়ে শুদ্ধ করে। এটাই আগুনের ধর্ম। দেশের যারা শত্রু, দেশের যা কিছু মিথ্যা, ভন্ডামি, মেকি তা দূর করার জন্য লেখক আগুনের সম্মার্জনা ব্যবহার করতে চেয়েছেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে, এর মাধ্যমেই সবকিছু শুদ্ধ হয়ে এক নতুন রূপ লাভ করবে।

২০) প্রশ্ন: “আমি সে দাসত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত।”- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: “আমি সে দাসত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত।”- উক্তিটিতে অপরের মুখাপেক্ষী হয়ে আপন সত্যকে অস্বীকার করার যে দাসত্ব, প্রবন্ধকার সেই দাসত্বকে বুঝিয়েছেন। লেখকের মতে নিজের শক্তিতে যার বিশ্বাস নেই, আস্থা নেই, সে-ই অপরের কাছে মাথা নত করে। নিজের ব্যক্তিসত্তাকে বিসর্জন দিয়ে সে স্বীকার করে অপরের দাসত্ব। আর যার নিজের ওপর বিশ্বাস আছে সে কখনো অপরের ইচ্ছাধীন চলে না, ভন্ডামিকে প্রশ্রয় দেয় না। এ বিষয়টিই প্রশ্নোক্ত বাক্যে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রশ্ন-২১৷ কবি নিজেকে “অভিশাপ রথের সারথি” বলে অভিহিত করেছেন কেন?
উত্তর: সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন বলেই কবি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন। কবি পুরাতন-জীর্ণ সমাজকে ঢেলে সাজাতে চান। কিন্তু এ জন্য কবিকে শত বাঁধা ও আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। কবি এ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি তাদের অন্যায়কে অভিশাপ হয়ে ধ্বংস করতে চান। তাই তিনি নিজেকে এ ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন।

প্রশ্ন-২২। ‘সবচেয়ে বড় দাসত্ব’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘সবচেয়ে বড় দাসত্ব’ বলতে পরাবলম্বন বা পরনির্ভরশীলতাকে বোঝানো হয়েছে। নিজ শক্তি, সাহস আর সত্যের ওপর বিশ্বাস স্থাপনই হলো স্বনির্ভরতা। আর যার নিজের সাহস, শক্তি আর সত্যের প্রতি বিশ্বাস নেই, আস্থা নেই সে-ই কেবল অন্যের দাসত্ব করে। এই পরনির্ভরশীলতার কারণে ধীরে ধীরে সে আত্মশক্তি হারিয়ে ফেলে। এ কারণে পরনির্ভরশীলতাকে লেখক সবচেয়ে বড় দাসত্ব বলে মনে করেন।

প্রশ্ন-২৩৷ ‘আগুনের সম্মার্জনা’ বলতে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘আগুনের সম্মার্জনা’ বলতে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে সমাজে অসত্যরূপী আবর্জনা দূর করার জন্য লেখকের সত্যের শক্তি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহী সত্তাকে বোঝানো হয়েছে। আগুন সবকিছু পুড়িয়ে শুদ্ধ করে। এটাই আগুনের ধর্ম। দেশের যারা শত্রু, দেশের যা কিছু মিথ্যা, ভণ্ডামি, মেকি তা দূর করার জন্য লেখক আগুনের সম্মার্জনা ব্যবহার করতে চেয়েছেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে, এর মাধ্যমেই সবকিছু মুগ্ধ হয়ে এক নতুন রূপ লাভ করবে।

আরোও পড়ুনঃ   বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে লিখ

প্রশ্ন-২৪। মানুষ-ধর্মকে সবচেয়ে বড় ধর্ম বলা হয় কেন? অথবা, ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম’-বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম’ বলতে লেখক বুঝিয়েছেন যে, মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মিক সম্পর্কই সবচেয়ে বড় সত্য, আত্মিক বন্ধন-সম্প্রীতিই বড় ধর্ম। ধর্মীয় বিভেদ ভুলে গিয়ে লেখক সমগ্র মানবজাতিকে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। ধর্মীয় বিভেদ মানুষের সঙ্গে মানুষের মেলবন্ধনের প্রধান অন্তরায়। মানুষের মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হলেই ধর্মের সত্য উন্মোচিত হবে। মানুষ হিসেবে মানুষকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-সম্মান করাই মানবধর্মের মূলমন্ত্র। সমাজে মানবধর্ম প্রতিষ্ঠিত হলে শান্তি ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত হবে। সাম্প্রদায়িক বিভেদ দূর হবে। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই রক্ত-মাংসে গড়া, সবাই একই স্রষ্টার সৃষ্টি। এজন্যই লেখক বলেছেন, ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।’

২৫. কবি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন কেন?
উত্তর : সমাজের অনিয়মকে ভেঙে ফেলতে কবির যে অবস্থান, তার প্রেক্ষিতে তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন। সমাজের প্রচলিত, পুরাতন নিয়মকে ভেঙে নতুনকে প্রতিষ্ঠা করা খুব সহজ নয়। এতে প্রতিনিয়ত সমাজরক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়, নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। এসব জেনেও কবি তাঁর বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সকল অন্যায়, অবিচার আর অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। তাই তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন।

২৬. ‘আমার পথ দেখাবে আমার সত্য।’ – কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিককে তাঁর কর্ণধার পথ দেখাবে।
কর্ণধার বলতে প্রাবন্ধিক মানুষের ভেতরকার ঐশ্বরিক শক্তি বা অলৌকিক ক্ষমতাকে বুঝিয়েছেন। মানুষের মগজ ও মন পরম স্রষ্টার পরম শক্তি জ্ঞানশক্তি ও প্রেমশক্তিতে ভরপুর। প্রাবন্ধিকের বিশ্বাস সত্য সব অসৎ শক্তিকে পরাজিত করে মানুষকে পূর্ণতার পথে নিয়ে যায়। তাই প্রাবন্ধিকের সত্য বা ঐশীশক্তি বা সৎ শক্তি সকল প্রকার আলস্য কর্ম-বিমুখতা, পঙ্গুত্ব, নৈরাজ্য, অবিশ্বাস ও জরাজীর্ণতাকে পিছনে ফেলে তাকে ন্যায় ও সত্যের পথ দেখাবে।

২৭. ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।’ কেন?
উত্তর : বিদ্রোহী ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা তুলে ধরেছেন। আমরা সবাই একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। সবাই মিলে একই আকাশের তলে বসবাস করি, সবার রক্তই লাল, সৃষ্টিকর্তার আলো, বাতাস, খাদ্য উপভোগ করি। আবার আমরা সবাই একই সত্তার গুণগান করি। তাই ধর্মের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই। মানুষ হিসেবে আমরা একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এজন্য প্রাবন্ধিকের কাছে ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম’।

২৮. অন্তরে মিথ্যার ভয় থাকলে প্রাবন্ধিক কেন বাইরের ভয়কে ভয় মনে করেন?
উত্তর : অন্তরে যদি ভণ্ডামি, ছলনা, দুর্বলতা থাকে তাহলে বাইরের যে-কোনো শক্তিই তাকে পরাজিত করে বলে প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। যে-বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর লোককে দিনের পর দিন নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে পারে তারাই আজ সকলের দ্বারে ভিখারি। এদেশের ঐশ্বর্য বিদেশিরা লুটে নিয়ে যায় তার প্রতিবাদ না করে বাংলাদেশের মানুষেরা তাদের গোপনে সাহায্য করে বলে প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তির অবতারণা করেছেন।

২৯. কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলমানদের মিলনের অন্তরায়কে দূর করতে চেয়েছিলেন কেন?
উত্তর : মানব-ধর্মকে সবচেয়ে বড় ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করায় এবং হিন্দু-মুসলমানের মিলন প্রত্যাশায় কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায়কে দূর করতে চেয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম আজীবন মানব-ধর্মে বিশ্বাসী। তাঁর কাছে মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এবং দেশব্যাপী মানব-ধর্ম তথা সব ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা। আর এই কারণেই তিনি হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় দূর করতে চেয়েছিলেন।

৩০. ‘ভুলের মধ্য দিয়েই সত্যকে পাওয়া যায়।’ – বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : পৃথিবীতে যেমন অন্ধকার ভেদ করে আলো উদ্ভাসিত হয় তেমনি ভুলের পাহাড়ের মধ্য দিয়েই প্রকৃত সত্যের সন্ধান পাওয়া যায়। মানুষ পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এই পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধের দ্বারা আকৃষ্ট হয়। ইন্দ্রিয়ের দ্বারা সে প্রতিনিয়ত ভুল করে। সে ভুল যদি নিজের জ্ঞান দ্বারা সে নিজে উপলব্ধি করে তাহলে নিজেকে সংশোধন করা যায়। সংশোধিত হওয়ার পর সে তার প্রকৃত সত্য খুঁজে পায়। তাই এ কথা বলা যায় যে, মানুষ ভুল করে, সে ভুল আবার কখনো ফুল হয়ে ফুটে ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *